কৃষ্ণ বিবর বা ব্ল্যাক হোল্স কাকে বলে?




বিংশ শতাব্দীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ মহাকাশের ছায়াবৃত অঞ্চলগুলো সম্পর্কে বলেছেন, সেগুলো সম্ভবত কিছু কিছু বৃহৎ নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ। এই অন্ধকার কালো কালো গহ্বরগুলোকে বলা হয় কৃষ্ণ বিবর (Black Holes ) বা কোলাপসার (Collapars)। এই কালো গহ্বরগুলোর মধ্যাকর্ষণ শক্তি এত প্রবল যে, কোনো বস্তু এর মধ্যে প্রবেশ করলে আর বেরিয়ে আসতে পারে না। এমন কি আলোও এর মধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্ত হতে পারে না।




তোমরা কি জানো, এই অন্ধকার গহ্বরগুলো আসলে কী? 

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্বোয়ারগসচিন্ত (Karl Schwargschild) মহাকাশে এই কালো গহ্বরগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে বলেন। তিনি তত্ত্বগতভাবে প্রমাণ করেন যে, গহ্বরগুলো সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি ভরসম্পন্ন নক্ষত্ররাজির ধ্বংসাবশেষ।




এখন সূর্যের চেয়ে অধিক ভরসম্পন্ন একটি নক্ষত্র সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। মহাকাশের ছয়টি পরস্পর বিরোধী শক্তি-সাম্যের ফলে তারকার আকার স্বাভাবিক থাকে। এই শক্তিগুলো হলো, প্রচণ্ড উত্তাপের ফলে সংঘটিত প্রসারণ শক্তি এবং প্রবল মহাকর্ষ শক্তির ফলে সংঘটিত সঙ্কোচন শক্তি। এই দুই শক্তি নক্ষত্রের উপাদানকে প্রসারিত ও সঙ্কুচিত করে তার স্বাভাবিক আকার বজায় রাখে।


তারকাটির অস্তিত্কালের কোনো এক অবস্থায় কেন্দ্রস্থ উত্তাপের হ্রাসপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এর কেন্দ্রীয় জ্বালানিও শেষ হয়ে যায়। ফলে মধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল হয়। ধীরে ধীরে তারকাটি ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে তারকার মধ্যস্থিত অনুকণাগুলো ভেঙে যায় ও ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন আলাদা হয়ে যায়। ইলেকট্রনের মধ্যস্থিত পরস্পরের প্রতি যে বিকর্ষণ তা তারকাটির সঙ্কোচন কিছুটা কম করে। এই অবস্থায় তারকাটির নাম হয়, হোয়াইট ডোয়ার্ফ (White Dwarf)। এইভাবে তারাটি স্বাভাবিক আকারের থেকে একশ ভাগ ছোট হয়ে যায়। কিন্তু হোয়াইট ডোয়ার্ফের মধ্যাকর্ষণ শক্তি তার স্বাভাবিক অবস্থার শক্তির থেকে ১০০০০ গুণ বৃদ্ধি পায়।


আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মধ্যাকর্ষণের শক্তি এত বেশি বৃদ্ধি পায় যে ইলেকট্রনের বিকর্ষণও ফলবতী হয় না। তারাটি আরও সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং তখন ইলেকট্রন ও প্রোটন মিলে গিয়ে নিউট্রনে রূপান্তরিত হয়। এই অবস্থায় তারকাটির নাম হয় 'নিউট্রন স্টার'। এখন তার আকার হোয়াইট ডোয়ার্ফের থেকে আরও ৫০০ ভাগ ছোট হয়ে গেছে। তার মধ্যাকর্ষণ শক্তিও মূল আকারের থেকে বেড়ে গেছে ১০,০০০,০০০,০০গুণ ।




নিউট্রন স্টার হতে আলো নির্গত হওয়ার ফলে তার শক্তি আরও কমে যায় এবং সেটির আকার আরও ছোট হয়। একসময় এই তারকাটি থেকে কোনো বিকিরণই হয় না। এটাকে তখন ব্ল্যাক হোল অথবা কালো বিবর বলা হয়। এই বিবরগুলোর মধ্যাকর্ষণ শক্তি এত বৃদ্ধি পায় যে, যা কিছুই এর নিকটে আসে তাই ধরা পড়ে। কোনো কিছুই এর থেকে বাইরে আসতে পারে না।




বিজ্ঞানীরা এই মহাকাশের এই কালো বিবরের অস্তিত্ব এখনও অনুসন্ধান করছেন। তারা পরীক্ষামূলকভাবে কালো বিবরের অবস্থান চিহ্নিত স্থানগুলো হতে এক্স-রে এবং ইনফ্রারেড বিকিরণের কারণ অনুসন্ধান করছেন

Leave a Comment