মানুষ বুড়ো হয় কেন?
চোখে পড়ে বৈকি, একজন বেশ ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কেমন যেন বুড়ো হয়ে গেল। দাঁত হয়তো বা পড়ে গেল, চুল হয়তো বা পেকে গেল, দেহ হয়তো বা ন্যুব্জ হয়ে পড়ল। তখন সে হলো বৃদ্ধ ।
বুড়ো কি কেউ নিজের ইচ্ছায় হয়! এর একটা প্রক্রিয়া আছে, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে এ-প্রক্রিয়া চালু হয়, যার ফলে ছোট বাচ্চা বড় হয়, মধ্য বয়সে আসে, বুড়ো হয় ।
এক কথায়, বেঁচে থাকাটা হলো বিপাক, ইংরেজিতে বলে মেটাবোলিজম (metabolism)। আমরা যখন বলি যে, বেঁচে থাকার জন্য খাবার খাই, তার মানে হলো, শরীরের মধ্যে সেই খাবার পৌঁছে শরীরকে টিকিয়ে রাখে। অসুখ-বিসুখ হলে অবশ্য আলাদা কথা, সুস্থ অবস্থায় এটাই হলো বেঁচে থাকা ।
কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এমন নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলে না। ওই খাবার জিনিস শরীরের মধ্যে পৌছে বেঁচে থাকায় সাহায্য করল, তার বেড়ে ওঠায় সাহায্য করল, তার মানে হলো যে শরীরে নতুন সেল (cell) বা কোষ সৃষ্টি হলো। শরীরবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় পুষ্টি, আর ইংরেজিতে বলে এ্যানাবোলিজম (anabolism)।
এ পর্যন্ত বেশ ভালো কিন্তু শরীর যদি একনাগাড়ে পুষ্টি পেয়ে বেড়ে যেতে থাকে, তাহলে এক সময় সে তালগাছ-বটগাছ সব ছাড়িয়ে যাবে। তাই আর একদিকে ভারসাম্য আসে। এটা হলো ক্ষয়, যার ইংরেজি নাম হলো ক্যাটাবোলিজম (katabolism)।
একটা বিশেষ বয়স পর্যন্ত এই কোষদের সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকে, যাকে আমরা বলি বড় হয়ে ওঠা। তারপর একটা বেশ লম্বা সময় কাটে যখন এ্যানাবোলিজম আর ক্যাটাবোলিজম নিজেদের ঠিক করা নিয়মে চমৎকার ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। ভালো খাওয়া-দাওয়া পেলে, ব্যয়াম করলে ক্যাটাবোলিজম যে শরীরকে সহজে ক্ষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে না, সেটা বুঝতে পারছ? তবু ক্ষয় হতেই থাকে ৷
এইভাবে ক্ষয় হতে যখন আরম্ভ হয়, তখন তার লক্ষণগুলো একেবারে জ্বলজ্বলে হয়ে শরীরে ফুটে ওঠে। যে সেলগুলো এতদিন শরীরকে চালিয়ে এসেছে, এদের সংখ্যা যখন কমতে থাকে তখন কান, চোখ, দাঁত এরা সব আস্তে আস্তে অকর্মণ্য হতে থাকে। মাথার চুল পাকতে থাকে, গায়ের চামড়া কুঁচকাতে থাকে । হাত-পা ক্রমশ ঢিলে হতে থাকে ।
চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত শরীরের এই মেটাবোলিজম নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, কেননা সব নিয়ম-কানুন ঠিক পরিষ্কার নয়। আর বুড়োদের যে ঠিক কী আছে আর কী নেই, সেসব ব্যাপারের বৈজ্ঞানিক শব্দকে ইংরেজিতে বলা হয় জারন্টোলজী (gerontology) |
সবাই যে একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে ঘড়ি ধরে বুড়ো হয় তা কিন্তু নয়। একেবারে খুব কচি অবস্থাতেও একটা শিশু হঠাৎ বুড়িয়ে যেতে পারে। একে ইংরেজিতে নাম দেওয়া হয়েছে প্রোজেরিয়া (progeria) এটা কিন্তু একটা মরণান্তিক রোগ। তাই সোজা ভাষায়, মানুষ কেন যে বুড়ো হয় বলা একদম অসম্ভব।
Leave a Comment