অতি বেগুনী রশ্মি কাকে বলে?




সূর্যের আলো যখন একটি প্রিজম্ (Prism) এর মধ্যে দিয়ে যায়, তখন সেটি সাতটি রঙে বিচ্ছুরিত হয়। এই সাতটি রঙ হলো-বেগুনী, বেগুনী-নীল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বণ্টিত এই সাতটি রঙকে বলা হয় বর্ণালী (Spectrum)। আলোক তরঙ্গের আকারে ভ্রমণ করে। সূর্য রশ্মির বর্ণালীতে বিভিন্ন বর্ণের কম্পাঙ্ক বা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন। হার্টস্ (Hetrz)-এর এককের সাহায্যে এই কম্পাঙ্ক পরিমাপ করা হয়। যদি কোনো বস্তু সেকেন্ডে একবার স্পন্দিত হয় তাহলে তার কম্পাঙ্কের মাপ হবে এক হার্টস্ ।


সূর্যের বর্ণালী অর্ন্তগত সাতটি রঙের মধ্যে বেগুনী রঙের কম্পাঙ্ক সর্বাধিক এবং লাল রঙের কম্পাঙ্ক সর্বনিম্ন। অপরপক্ষে বেগুনী রঙের তরঙ্গ- দৈর্ঘ্য সর্বনিম্ন এবং লাল রঙের সর্বাধিক। আমাদের চোখ এই সাতটি রঙেই অভ্যস্ত । এইগুলোকে বলে দৃষ্ট বর্ণালী ।


তড়িৎ চুম্বকীয় রশ্মির এই সাতটি রং ছাড়া আরও অনেক বিচ্ছুরণ আছে, যেগুলো সাদা চোখে দেখা যায় না।


দৃষ্ট বর্ণালীতে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মাত্রা প্রায় 7.5x10 cm থেকে 4x10 cm, লাল আলোর (7.5x10 cm.) তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রশ্মিকে অবলোহিত রশ্মি (Infrared) বলে। অবলোহিত বিচ্ছুরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 1 mm থেকে 7.5x10 cm পর্যন্ত হতে পারে। অবহিত রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অক্ষের অধিক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রশ্মিকে বলা হয় মাইক্রোওয়েভ (Microwaves)। মাইক্রোওয়েভের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 1 mm থেকে 30cm পর্যন্ত হতে পারে। আবার মাইক্রোওয়েভের (Radio wave) বা বেতার-তরঙ্গ। অপরপক্ষে, বেগুনী রঙ (4x10 cm) অপেক্ষা কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্য থেকে অধিক তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রশ্মিকে বলা হয়। অতি বেগুনী রশ্মি (Ultra Violet Rays)। এই অতি বেগুনী রশ্মি 4 x10 cm থেকে 10 cm. তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে থাকে। অতি বেগুনী রশ্মি ছড়িয়ে আছে রঞ্জন রশ্মি (X- rays) যেটি মোটামুটি থাকে 107cm থেকে 10 cm. তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে। রঞ্জন রশ্মির পর আসে গামা রশ্মি (Gamma rays)। আমরা অতি - বেগুনী রশ্মি থেকে গামা রশ্মির দিকে অগ্রসর হলে দেখতে পাচ্ছি যে, রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কমে যাচ্ছে এবং কম্পাঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম্পাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে তরঙ্গের শক্তিও বৃদ্ধি পায়। সেই জন্য দেখা যায়, রঞ্জন রশ্মি এবং গামা রশ্মি দুটি উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বিকিরণ।


অতি বেগুনী রশ্মির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শক্তিও খুব উচ্চমানের। অতি বেগুনী রশ্মির অধিক সম্পাত শরীরের ত্বককে পুড়িয়ে ফেলতে পারে, এমনকি ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি করতেও পারে। সূর্য বিপুল পরিমাণ অতি বেগুনী রশ্মি বিচ্ছুরিত করে। সৌভাগ্যবশত এর অধিকাংশ পরিমাণই উচ্চ বায়ুমণ্ডলে। ওজোন (Ozone) নামে এক প্রকার গ্যাস শুষে নেয়, এর ফলে খুব অল্প পরিমাণ অতি বেগুনী আলো পৃথিবীতে আসে। নইলে জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব হতো না।




আমাদের জীবনে অতি বেগুনী রশ্মির প্রয়োজনও আছে। তবে তা অতি অল্প পরিমাণে। এটি কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং ত্বকের কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থকে ভিটামিন ডি-তে পরিবর্তিত করতে সাহায্য করে। অতি বেগুনী রশ্মি চোখের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।


মধ্যরাতের সূর্যের দেশ কাকে বলে? 


মধ্যরাতের সূর্যের দেশ বলতে বিশ্বে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার নরওয়ে অঞ্চলকেই বোঝায়। এই অঞ্চলে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত সময়টিতে সূর্য কখনও সম্পূর্ণভাবে অস্তমিত হয় না। এর ফলে এই সময়টিতে রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে গোধূলির ম্লান আলো রাত জুড়ে বিরাজমান থাকে। এই অঞ্চলের উত্তরাংশে ছয় মাস ধরে সূর্য কখনই সম্পূর্ণ অস্ত যায় না। কিন্তু শীতের ছয় মাস আবার সূর্য ওঠেই না। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে আশ্চর্য অলৌকিক মহাজাগতিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে আসেন। সেটি হলো-নিশীথ আলো ।




মেরু অঞ্চলে যখন রাতে সূর্য দিগন্তের উপর আসে অস্তমিত হয় না- তখন মধ্যরাতের সূর্য দেখা যায়। পৃথিবীর অক্ষরেখা তার কক্ষ সমতলের 23.5° ঝুঁকে যাওয়ার ফলে, প্রতিটি গোলার্ধ গ্রীষ্মকালে সূর্যের দিকে হেলে যায়, আবার শীতকালে সেখান থেকে সরে যায়। এর ফলে, সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চল বছারের একটি বিশেষ সময় মধ্যরাতেও সূর্য দৃশ্যমান হয়। কিন্তু যখন কুমেরু অঞ্চলে শীতকাল, তখন দিন এবং রাতের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা বা না। সূর্য সেখানে ওঠেই না। সমগ্র কুমেরু অঞ্চল অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ঠিক সেই সময় (এপ্রিল থেকে জুলাই) সুমেরু অঞ্চল দিনের ২৪ ঘণ্টাই সূর্যালোক দিন উপভোগ করে। সূর্য ওঠে এবং অত্যন্ত ধীর গতিতে পরিক্রমা শুরু হয়। সন্ধ্যাবেলায় সূর্য অস্ত যেতে যেতে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত পৌঁছায়। কিন্তু তারপর সম্পূর্ণ অন্ত না গিয়ে পুনরায় উঠতে শুরু করে। সুমেরু অঞ্চলে প্রায় ছয় মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকে। কিন্তু প্রকৃত মধ্যরাতে সূর্য দেখা যায় ২১ জুন তারিখে। ছয় মাস পরে সুমেরু। 

Leave a Comment