মৃতদেহকে সুগন্ধযুক্ত করে সংরক্ষণের বিশেষ প্রক্রিয়ায় কবরস্থ করাকে 'মমি' (Mummies) করা বলে। 'মমি' শব্দটি এসেছে আরবীয় 'মামাইয়া'- শব্দটি থেকে। এর অর্থ হলো, মৃতদেহকে মোম অথবা আলকাতরা জাতীয় পদার্থ দিয়ে সংরক্ষণ করা। 'মমি' সংরক্ষণ প্রাচীন মিশরের একটি বহুল প্রচলিত প্রথা। তোমরা কী জানো, কেন মিশরীরা মৃতদেহকে এভাবে সংরক্ষণ করে রাখত?


আসলে, মিশরীরা মৃত্যুর পরও জীবনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করত এবং সেজন্যই তারা মৃতদেহকে মমি করে রাখত। তারা ভাবত যে, মৃতের আত্মা মানুষের মুখের আকৃতিবিশিষ্ট পাখির রূপধারণ করে সারাদিন উড়ে বেড়ায় কিন্তু রাতে তারা অশুভ আত্মাদের ভয়ে তাদের পরিত্যক্ত দেহে ফিরে আসে। সেইজন্য মৃতদেহগুলো মৃত্যুর পর ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হতো। যাতে আত্মারা নিজ নিজ কবর চিনে প্রবেশ করতে পারে ।


খ্রিস্ট জন্মের ৩০০০ বছরেরও আগে মিশরীয়রা মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর বুকে শায়িতভঙ্গিতে মৃতদেহের কবর দিত। তপ্ত বালুকাই মৃতদেহ সংরক্ষিত রাখত। পরবর্তীকালে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পাথর কেটে বানানো কবরে কবরস্থ করা হতো। কিন্তু পিরামিড (Pyramid) এবং পাথরে কাটা কবর, মরু বালুকার মতো শুষ্ক ছিল না বরং এগুলোর ভিতরের বাষ্প মৃতদেহগুলোকে নষ্ট করে ফেলত। সে কারণে, মিশরীরা কবরস্থ মৃতদেহ সংরক্ষণের উন্নত উপায় উদ্ভাবনের চিন্তা শুরু করল। এভাবেই 'মমি'-র মধ্যে মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা উদ্ভাবিত হলো ।


যুগে যুগে ‘মমি' উদ্ভাবিত পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটেছে। যখন কেউ মারা যেত, তখন কিছু কিছু প্রত্যঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, পরিপাক যন্ত্র এবং ফুস ফুস মৃতদেহের অভ্যন্তর থেকে বের করে নেওয়া হতো। এগুলো 'ক্যানোপিক জার' (Canopic Jars) নামে চারটি আলাদা পাত্রে পৃথক পৃথকভাবে রাখা হতো। পরে সেগুলোকে পুনরায় মৃতদেহে সংস্থাপিত করা হতো। এরপর মৃতদেহটির ভিতরে লবণ প্রয়োগ করে শুষ্ক মরু বাতাসের সাহায্যে অভ্যন্তরের বাষ্প বের করে দেওয়া হত। শুষ্ক হয়ে যাবার পর দেহটিকে স্নান করিয়ে পাইন গাছের আঠা দিয়ে সর্বাঙ্গে ঘষা হতো এবং কয়েকশত মিটার দির্ঘ লিনেন (linen) দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় সত্তর দিন সময় লাগত। ইতিমধ্যে কাঠ মিস্ত্রীরা 'মমি'টি রাখার জন্য বিশেষ ধরনের কাঠের আধার নির্মাণের কাজ শেষ করে ফেলত। যদি মৃতদেহটি কোনো ধনী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির হতো তাহলে বেশ কয়েকটি আধার প্রস্তুত করা হতো এবং প্রত্যেকটি আধারগুলো চিত্রিত করত। কবরের অভ্যন্তরের দেওয়ালটিতে মৃত মানুষটির জীবন-কাহিনি সম্বলিত চিত্রাদি আঁকা হতো। এভাবে মিশরীয়রা মনে করত, তারা মৃত মানুষটির পরবর্তী জীবনের জন্য সমস্ত কিছু প্রস্তুত করে রাখল।

Leave a Comment