আমরা মনে রাখি কেমন করে?
কোনো কিছু শেখা বা মনে রাখার কাজ হলো স্মরণশক্তির। দেখা বা শোনা বা শেখা এসবই নির্ভর করছে স্মরণশক্তির ওপর। সারা জীবনভর আমরা যা কিছু দেখে যাই, যা কিছু আমাদের অভিজ্ঞতা, সেসব মস্তিষ্কে জমা হয়ে যায়। মস্তিষ্কে ধরে রাখার ক্ষমতাই হলো স্মরণশক্তি।
আমাদের এই মনে রাখার ব্যাপারটা নিয়ে দুটো তত্ত্ব প্রচলিত আছে। এক হলো, স্মরণশক্তি একটা ক্রমিক গতিশীল প্রক্রিয়া। কোনো কিছু শেখা বা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমস্ত সত্ত্বায় একটা ধাক্কা বা আঘাত দেখা দেয়। ধাক্কাটা তরঙ্গায়িত হয়ে গিয়ে পৌছায় মস্তিষ্কের নিউরনদেন মধ্যে। আর সেখানেই এই অভিজ্ঞতাটা সঞ্চিত হয়ে থাকে। এটাই খুব বেশি প্রচলিত মত ।
অন্য তত্ত্ব, হলো যে, আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, দেখা বা শোনা যাই হোক, এরা যে অনুভূতির জন্ম দেয়, সেগুলো মস্তিষ্কে কিছু স্থায়ী পরিবর্তন ঘটিয়ে স্মৃতি হিসেবে টিকে থাকে ৷
কিছু কিছু জীববিজ্ঞানী বলেন, আমাদের মস্তিষ্কে যে বিচিত্র রাসায়নিক পদার্থ (RNA-ribo-nucleic acid রাইবো-নিউক্লেইক-এ্যাসিড) আছে, তার কাজ হলো ক্রমিক অভিজ্ঞতাদের ধরে রাখা। এদের মতে, মস্তিষ্কে নিউরনে যে RNA আছে তার বৃদ্ধিকাল হলো তিন বছর বয়স থেকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত। মানুষের এই বয়সটাতে স্মরণশক্তি বাড়তে থাকে। তারপর বছর চল্লিশ থেকে প্রায় ষাট বছর পর্যন্ত একভাবে থেকে কমতে আরম্ভ করে। তাই ষাট বছর বয়সের পর স্মরণশক্তি একটু কমলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। তবে এটা নিয়ম নয় ।
স্মৃতিতে কোনো কিছু ধরে রাখার একমাত্র উপায় হলো, বিষয়টিকে বারবার আবৃত্তি করা। মনস্তত্ববিদরা বলেন যে, যা আমরা মনে রাখতে চাই তার যদি একটা ছবি মনের মধ্যে তৈরি করে নিই, একটা চিত্রকল্পরূপ যদি মনে মনে খাড়া করতে পারি, তাহলে মনে রাখা সহজ হয়। আর অনেকদিন পর্যন্ত মনে রাখাও সম্ভব হতে পারে। কোনো কিছু শোনার পর সেটা আরও বেশি করে মনে রাখা যায় । গান শুনলে বা বক্তৃতা শুনলে সেটা কেমন মনে থাকে, দেখেছ তো?
Leave a Comment