মূত্র পরীক্ষার দ্বারা রোগ নির্ণয় এ-কালের এক ব্যাপক প্রচলিত পদ্ধতি । রসায়নাগারে বিশেষভাবে মূত্র পরীক্ষার সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ নির্ণয় সম্ভব হয়। তবে সাধারণ মূত্র পরীক্ষায়ও অনেক রোগ ধরা পড়ে। তোমরা কি জানো এই মূত্র পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে কোন কোন রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়?
ইউরোক্রোম রঞ্জকের উপস্থিতির জন্য সাধারণত প্রস্রাবের রং শুকনো ঘাস বা খড়ের মতো হলুদ হয়। জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তির মূত্রের রং কিছুটা গাঢ় হলুদ হয় 'জন্ডিস' রোগীদের প্রস্রাবের রং আরও গাঢ় হলুদ হয়। আবার ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স খাওয়ার জন্যও প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। ভিটামিন বি- কমপ্লেক্সে রিবোফ্লাবিন (Rebiflavin) থাকার ফলেও প্রস্রাব হলুদ হয়। যদি, আবহাওয়ার সংস্পর্শে এসে প্রস্রাবের রং কালো বা ধূসর হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তি ‘এ্যালক্যাপ্টোরিয়া' (Alcaptonuria) নামক এক ধরনের জন্মগত রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। আবার যদি স্বাভাবিকভাবেই প্রস্রাবের রং কালো অথবা গাঢ় বাদামি দেখায় তাহলে শরীরে রক্তের লোহিত কণিকার উপাদানের বিপাকীয় ব্যবস্থায় (haemoglobin metabolism) কোনো রকম গোলমাল হয়েছে বুঝতে হবে।
ডায়াবেটিক (Diabetic) বা মধুমেহগ্রস্থ রোগীর প্রস্রাব খোলা জায়গায় পড়ে থাকলে কিছু সময় পরে দেখা যায় সেখানে পিঁপড়েরা জমা হয়েছে । এর কারণ হলো, ডায়াবেটিক রোগীর প্রস্রাবে শর্করা বা চিনির উপস্থিতি। শর্করা মিশ্রিত আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে দেখার জন্যে প্রস্রাবে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বেনেডিক্ট দ্রবণ (Benedict solution) মিশিয়ে দেওয়া হয়। এই মিশ্রণটি যদি লাল রঙের অধক্ষেপ সৃষ্টি করে (Precipitate) তাহলে বুঝতে হবে যে মূত্রে গ্লুকোজ রয়েছে।
প্রস্রাবে এ্যালবুমিনের (Albumin) উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য তরল এ্যাসিটিক এ্যাসিড মিশিয়ে গরম করা হয়। যদি সাদা রঙের অধক্ষেপ জমা হয় তাহলে বুঝতে হবে এ্যলবুমিন আছে। স্বাভাবিক প্রস্রাবে এ্যালবুমিন থাকে না।
শরীরের চর্বিগত বিপাকীয় ব্যবস্থায় কোনো গোলমাল হয়েছে কিনা সেটি নির্ণয়ের জন্যে বিশেষ ধরনের মূত্র পরীক্ষা পদ্ধতি আছে। এই পরীক্ষায় এ্যামোনিয়াম সালফেট, সোডিয়াম নাইট্রোপ্রসাইড এবং এ্যালকালির সহযোগে মূত্র পরীক্ষা করা হয়। যদি লাল বর্ণান্তরণ ঘটে তাহলে বুঝতে হবে এই ব্যবস্থায় অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক মূত্রে এই লাল রং থাকা উচিত নয়।
জীবাণু পরীক্ষণ পদ্ধতির (Urine Culture) ফলে শরীরে জীবাণুর সংক্রমন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। মূত্র পরীক্ষা ডাক্তারের নির্দেশ অনুসারেই করা উচিত।
Leave a Comment