হৃদযন্ত্র মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটির কাজ হলো শরীরের সমস্ত অংশে রক্ত সঞ্চালিত করা। হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়টি (Ventricle) সঙ্কুচিত হলে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে এবং ধমনীগুলোতে প্রবেশ করে। প্রবেশের সময় রক্তের চাপের ফলে ধমনীগুলো প্রসারিত হয়।




রক্তবাহী ধমনীগুলোর অভ্যন্তরের পেশীসমূহে শৈষ্মিক ঝিল্লির একটি আবরণ আছে। এই ঝিল্লির রক্ত চাপকে বাধা দেয়। রক্ত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষুদ্রতর শিরা বা ধমনীগুলোতে প্রবেশ করে। রক্তের চাপের সাহায্যেই আমরা ধমনী গাত্রে এই চাপের পরিমাণ নির্ণয় করতে পারি। হৃদযন্ত্রের পেশীসমূহের ক্ষমতা রক্তবাহী নালীগুলোতে প্রবাহিত রক্তের পরিমাণ এবং ধমনীগুলোর অবস্থার উপরই রক্তচাপের পরিমাণ নির্ভর করে।




রক্তচাপ দুই প্রকারের হয় ১. অধিকতম (maximum) এবং ২. (minimum)। হৃদযন্ত্রের বাম নিলয়টি সঙ্কুচিত হওয়ার ফলেই অধিকতম রক্তচাপের সৃষ্টি হয় । একে চিকিৎসা-শাস্ত্রের পরিভাষায় বলা হয় প্রসঙ্কোচক রক্তচাপ বা সিস্টোলিক প্রেসার (Systolic Preessure)। হৃদযন্ত্রের স্পন্দন শুরু হওয়ার ঠিক আগের চাপকে সম্প্রসারক চাপ (Diastolic Pressure) বলে।




চিকিৎসকেরা রক্তচাপ পরিমাপের জন্যে এমন একটি যন্ত্র ব্যবহার করেন যেটির অভ্যন্তরে কাঁচের নলের মধ্যে রক্ষিত পরিমিত পরিমাণ পারদ রক্তচাপের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে ওঠা-নামা করে। যন্ত্রটির গায়ে মিলিমিটারে সংখ্যা নির্দেশ চিহ্নিত থাকে। একজন স্বাভাবিক সুস্থ যুবকের রক্তের সিস্টোলিক চাপ হয় গড়ে ১২০ মি.মি. এবং ডায়াস্টোলিক চাপ হয় প্রায় ৮০ মি.মি. । সংখ্যা নির্দেশ লেখা হয় ১২০/৮০ এইভাবে ।




বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধমনীগুলোর শিথিলতা কমে আসে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। দুশ্চিন্তা, উত্তেজনা বা ব্যায়াম ইত্যাদির ফলেও সাময়িকভাবে রক্তচাপের বৃদ্ধি ঘটে। নানা ধরনের রোগের ফলেও রক্তচাপ বাড়ায়। কোনো ব্যক্তির রক্তচাপ যদি তার বয়সের হিসেবের সঙ্গে অধিকতম ১০০ চাপ যুক্ত হয় অথবা ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ১০০-র বেশি হয় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপের বা রক্ত চাপাধিক্যের (hypertension) রোগী বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপ হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বা গতি বন্ধ করে দিতে, কিডনী বা বৃক্কের ক্ষতিসাধন করতে অথবা সন্ন্যাস রোগের আক্রমণ ঘটাতে পারে।




যখন কোনো ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত অথবা কোনো আঘাতের ফলে তার প্রচুর পরিমাণ রক্তপাত ঘটে তখনই অস্বাভাবিক রকম নিম্ন রক্তচাপ ঘটে। যখন রক্তচাপ প্রচুর পরিমাণে নিম্নগামী হয় তখন মগজে এবং অন্যান্য দেহাংশে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে মৃত্যু ঘটতে পারে। যে সমস্ত ঔষধ রক্তশিরার মাংসপেশী গঠিত প্রাচীরকে সঙ্কুচিত করে, ডাক্তার সেইসব ঔষধ ব্যবহার করেন রক্তচাপ বৃদ্ধি করার জন্য।




রক্তশিরার সঙ্কোচনের ফলে অস্বাভাবিক রকমভাবে রক্তচাপ বাড়তে পারে। এক বা উভয় মূত্রগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলেও অধিক পরিমাণ “রেনিন’ (renin) বহিষ্কৃত হয়। শরীরের অস্বাভাবিক রকম বেশি ওজন এবং ব্যায়ামাদি শারীরিক শ্রমের কাজের অভাবেও রক্তচাপাধিক্য ঘটে। রক্তচাপাধিক্যতার ফলে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে চক্ষু বা মগজের রক্তশিরা ফেটে যেতে পারে এবং তার জন্য সেই ব্যক্তি অন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা রক্তকোষসমূহ থেকে রক্তস্রাব হতে পারে।




যখনই কোনো ব্যক্তি রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় অথবা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় তখনই কোনো ভালো ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা করানো উচিত ।

Leave a Comment