পানামা ও সুয়েজ খাল বিশ্বের দুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ্য নির্মিত কৃত্রিম পানিপথ। পানামা খাল সুয়েজ অপেক্ষা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটি আন্তসাগরীয় পানিপথ। খালটি পানামার ইসমাসের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগরে মিলন ঘটিয়েছে। এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮২ কিলোমিটার (৫১ মাইল)। এটির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধিকার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ।
খালটির উভয় প্রান্তে দুটি ছোট সমুদ্র সমতল ভাগ আছে। তিনজোড়া পানি-কপাট (Locks) আছে যেগুলো জাহাজকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩২ মিটার উপরে তুলে দেয়। একটি ৩২ মাইল অতি প্রশস্ত ভাগ (Section) আছে, যার মধ্যে গাটন লেক এবং গাইলার্ডকাট নামে আট মাইল দীর্ঘ অপরিসর চ্যানেল আছে। এটি মহাদেশীয় বিভাজিকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। এর লক-চেম্বারটির পরিসরের যে মাপ (১০০০ ফুট দৈঘ্য, ১১০ ফুট প্রস্তুত, ৪১ ফুট বেধ) তাতে তার মধ্যে দিয়ে বাণিজ্য জাহাজ এবং নৌ- বাহিনীর জাহাজগুলো চ্যানেলটির মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে পারে। কেবলমাত্র বড় বড় জাহাজগুলো প্রণালিটির মধ্যে ঢুকতে পারে না।
খালটি ভ্রমণ-দূরত্ব সংক্ষেপ করে নিয়ে জাহাজের চলাচল যথেষ্ট সহজ করে দিয়েছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল যাতায়াতের ক্ষেত্রে জাহাজগুলো প্রায় ৮০০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব সংক্ষেপ করতে সক্ষম হয়েছে। ক্যানালটি নির্মিত হওয়ার পূর্বে জাহাজগুলোকে কেপ হর্ন প্রণালীটি ঘুরে যেতে হতো। উত্তর আমেরিকার এক উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দিকের বন্দরে যেতে প্রায় ৩৫০০ মাইল দূরত্ব কমে গেছে। যে সব জাহাজ ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত করে সেগুলো এই ক্যানালটির সুযোগ নিয়ে প্রায় ২০০০ মাইল দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছে।
ক্যানালটির পানি-কপাট নিয়ন্ত্রণ করা হয় গুটানলেক এবং ম্যাডেনলেক থেকে প্রবাহিত পানিশক্তির সাহায্যে। পানি কপাটগুলো একই সময় জাহাজগুলোকে উভয়দিকে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। প্রতিটি লক- গেটের ৬৫ ফুট চওড়া ও ৭ ফুট মোটা কব্জা আঁটা দুটি পান্না আছে। ৪৭ ফুট থেকে ৮২ ফুট পর্যন্ত কপাটগুলো উঁচু। মোটরের সাহায্যে একটি নিয়ন্ত্রক-টাওয়ার থেকে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
অপেক্ষা করার সময় ধরে খালটি অতিক্রম করতে একটি জাহাজের ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। কোনো জাহাজ খালে প্রবেশের অনুমতি পেলে গভীর পানির ওপর তার চলার গড় সময় হবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। পানামা ক্যানেলের মধ্যে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা ১৯১৬ সালে ৮০৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৭০ সালে ১৫,৫২৩-এ দাঁড়িয়েছে। ১৯৭০ সালে মালবাহী জাহাজ ১৩২,৫০০,০০০ টন পরিমাণ মাল বহন করেছে। পানামা ক্যানেল কোম্পানি মার্কিন কংগ্রেস কর্তৃক সংগঠিত একটি কর্পোরেট এজেন্সি। তাদের কাজ ক্যানেল সংরক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবসা পরিচালনা করা।
পানামা ক্যানেল নির্মাণের ইতিহাসটি খুব চমকপ্রদ। ষোড়শ শতাব্দীতে স্পেনীয়রা ইসঘমাসের মধ্যে দিয়ে একটি খাল কাটার পরিকল্পনা করে। ১৮৪৬-এ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেও ১৮৫৫-এ এই প্রকল্পের জন্য আর্থিক সাহায্য দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সুয়েজ খালের রূপকার ফার্দিনান্দ লেসেস্পকে প্রধান করে পানামা ক্যানেল কোম্পানি গঠিত হয়। যাই হোক, দশ বছরের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা, প্রানের ত্রুটি, ইয়োলো ফিবার, কলেরা এবং ম্যালেরিয়ার আক্রমণে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। ১৮৯৪-এ নতুন পানামা ক্যানেল কোম্পানি আগের কাজকর্ম পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করেন, কিন্তু আর্থিক অভাবে কাজ-কর্ম অতি সামানাই এগোয়। ইতিমধ্যে ১৯০৩ সালে পানামা কলম্বিয়া কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। সেই বছরই পানামা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যে 'হে-বুনাউ- ভারিলা' (Hay Bunau Varilla) চুক্তির ফলে পানামা খাল নির্মাণের দায়িত্ব আমেরিকার হাতে চলে যায়। ১৯০৪ সালে ক্যানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে এটি প্রথম জাহাজ চলাচলের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ক্যানেলের অনেক সংযোজন ও নির্মাণ হয়েছে।
বড় বড় ভারী জাহাজ চলাচলের এবং আমেরিকার বিশাল বিশাল বিমানবাহী জাহাজ চলাচলে অসুবিধা দেখা দেওয়ায় বর্তমানে ক্যানেলটির পরিসর বাড়ানোর একটি প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।
মাটির কলসিতে কীভাবে পানি ঠাণ্ডা হয়। আমরা জানি যে, গ্রীষ্মকালে মাটির কলসিতে পানি রাখলে অল্প সময়ের মধ্যে তা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কিন্তু সেই পানি কোনো ধাতু বা কাঁচ নির্মিত পাত্রে রাখা হলে তার উষ্ণতার কোনও প্রভেদ হয় না। জানো কী কেন এমন হয়?
এই পানি ঠাণ্ডা হওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে পদার্থবিদ্যার একটি সূত্র আছে। সুত্রটি হলো- পানি ঠাণ্ডা হওয়ার কারণ বাষ্পীভবন (Evaporation)। যখন কোনো তরল পদার্থ বাষ্পীভূত হয় তখন তার উষ্ণতা হ্রাস পায়। কারণ, বাষ্পীভবনের জন্য যে উত্তাপ প্রয়োজন সেটি তরল পদার্থই সরবরাহ করে থাকে। উত্তাপ হারানোর ফলে তরল পদার্থের উষ্ণতাও কমে যায়।
মাটির কলসির গায়ে অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। যখন পাত্রটির মধ্যে পানি রাখা হয় তখন সেই পানি ছিদ্রগুলো দিয়ে চোঁয়াতে থাকে এবং বাষ্পীভূত হতে থাকে। এই বাষ্পীভবন পানি ঠাণ্ডা হতে সাহায্য করে। যদি সেই একই পানি কোনো ধাতু বা কাঁচের পাত্রে রাখা হয় তাহলে এই শ্রেণির পাত্রে ছিদ্র না থাকায় পানি চুঁইয়ে বাইরে আসতে পারে না এবং পাত্রের গায়ের চোঁয়ানো পানির অভাবে বাষ্পীভবন না হওয়ার জন্য পানিও ঠাণ্ডা হয় না।
গ্রীষ্মকালে আমরা পাখার তলায় ঠাণ্ডা অনুভব করি। এই ঠাণ্ডা বোধ হওয়াও আমাদের ত্বকের অজস্র ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসা ঘামের বাষ্পীভবনের ফলেই ঘটে। গ্রীষ্মের সময় কুকুরদের জিভগুলো সাধারণত ঝোলান অবস্থায় থাকে।
তারা জিভটা বার করে রাখে বাষ্পীভবনের ফলে ঠাণ্ডা অনুভূতি পাবার
জন্যে। গরমের সময় রাস্তায় পানি দিতে দেখা যায়। এর ফলেও বাষ্পীভবন
ঘটে এবং রাস্তার বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে যায় ।
Leave a Comment