শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্তকে পাম্প করে সঞ্চালন করে দেওয়ার এক শক্তিশালী অঙ্গ হলো হার্ট বা হৃৎপিণ্ড। মানুষের হৃৎপিণ্ডের আকার হয় তার হাতের মুঠির মতো । দুই ফুসফুসের মধ্যবর্তী স্থানে বক্ষদেশে এর অবস্থান। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি স্পন্দিত হয়। মস্তিষ্ক কর্তৃক এর নিয়ন্ত্রিত হওয়ার দরকার পড়ে না । হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ অবিরত চলতে থাকে। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে রক্ত সঞ্চালিত হয়।


মূলত হৃৎপিণ্ড হলো একটি মাংসপেশী। আর এরা নিজ-কার্য সম্পাদন করে। তাদেরকে বলে 'করোনারী আর্টারী'। হৃৎপিণ্ডের কার্যাবলি সম্পাদনে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এরা প্রদান করে। যদি 'করোনারী আর্টারী' বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে হৃৎপিণ্ডের কোনো কোনো মাংসপেশী মরে যায়। এই ঘটনাই 'হার্ট-অ্যাটাকে' পরিণত হয়-যা মারাত্মক হতে পারে। করোনারী আর্টারীর বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাপারটি ঘটে রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়ার ফলে। এই রোগে—আর্টারী বা শিরাগুলো উঁচু-নিচু, অমসৃণ ও সরু হয়ে যায়। আর ঐ রকম অবস্থাটি সৃষ্টি হয় রক্তে অধিক পরিমাণ চর্বি থাকার জন্যে। এই জন্যই হৃদরোগগ্রস্থ ব্যক্তিকে তৈলাক্ত বা চর্বি জাতীয় কোনো খাবার খেতে নিষেধ করা হয়।

বাত বা শ্লেষ্মাঘটিত জ্বরও কখনও কখনও হৃৎরোগের কারণ হতে পারে। সাধারণত এই রোগে প্রথমে গলা ব্যথা হয়। স্ট্রেপটোকসাই (Streptococci) নামক এক প্রকার জীবাণুর আক্রমণই গলা-ব্যথার কারণ । এক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডটি ফুলে যায়। যদি রোগাক্রমণ খুব বেশি হয় তাহলে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শ্লেষ্মাঘটিত ঐ জ্বরের ফল ২০ থেকে ৩০ বছর পরেও দর্শিত হতে পারে।


তৃতীয় ধরনের হৃদরোগকে বলে “কনজেনিটাল” হৃদরোগ—যা মানুষের জন্মগত। কখনও কখনও হৃৎপিণ্ডের কপাটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। তার ফলে হয় তা খুব শক্তভাবে থাকে, না হয় তা ঠিকমতো বন্ধ হয় না। কখনও কখনও হৃৎপিণ্ডের দুঅংশের মধ্যবর্তী স্থানের দেওয়ালে ফাঁকা বা ফোঁকর থাকে ৷ এটাই নির্ধারিত হয়েছে যে প্রতি ২০০ জন নবজাত শিশুর মধ্যে এক জনের এই ধরনের ত্রুটি থাকে। হৃৎপিণ্ড যদি ভালোভাবে গঠিত না হয় তাহলে তার কার্যাবলিও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় না। রক্ত প্রয়োজনমতো অক্সিজেন পায় না। শিশুর নিশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় ৷ ফুসফুসের মাধ্যমে রক্তের কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিত্যক্ত হতে পারে না । তার ফলে শিশুকে নীল বরণ দেখায়। এই ধরনের শিশুকে নীল শিশু বলে।

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে রোগী বুকে ও বাম হাতে প্রচণ্ড বেদনা অনুভব করে। তার শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। হৃদ-স্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং রোগীর দম-আটকা ভাব লাগে। এ রকম অবস্থায় পূর্ণ-বিশ্রাম নেওয়া দরকার এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই কর্তব্য। ভাজা খাবার খাওয়া তখন উচিৎ নয়। হৃদ-রোগগ্রস্থ ব্যক্তির ধূমপান ও মদ্যপান নিষিদ্ধ। দুধ ও ফল হৃদ রোগের বিশিষ্ট খাবার। হৃদরোগকে প্রতিহত করতে হলে প্রত্যেকের একটু আধটু হাল্কা ব্যায়াম করা উচিৎ। তাছাড়া যখনই কেউ পরিশ্রান্ত হয়ে যায়, তখনই তার বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ।


Leave a Comment