ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পোলিশ অর্গানাইজেশন একটি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা। এই শব্দগুলোর মধ্যে ইন্টারন্যাশনালের ইন্টার (Inter) পোলিশের পোল (pol) শব্দ জুড়ে তৈরি হয়েছে ইন্টারপোল (Interpol ) ।


এটি এমন একটি সংস্থা যার রাজনীতি, ধর্ম, জাতি কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সদস্য সংখ্যা বিশ্বের একশটির ওপর দেশ। বর্তমানে কমিউনিস্ট দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র যুগোস্লাভিয়া এর সদস্য। সদরদপ্তর ফ্রান্সের পারী শহরে।


পুলিশের কাজ হলো অপরাধী পাকড়াও করা। অথচ সে অপরাধী যদি তার দুষ্কর্মের পর নিজের দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে অপর একটি বিদেশি রাষ্ট্রে গিয়ে পৌঁছায় তাহলে দেশের পুলিশ তাকে আর ধাওয়া করতে পারবে না। তখন ডাক পড়ে এই আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার। এক দেশ অন্য দেশকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে তখন পরস্পরের সহযোগিতায় অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। সদস্য দেশগুলোর প্রত্যেকেরই প্রতিনিধি ইন্টারপোলে আছে। আর এইসব দেশের পুলিশ হর্তা-কর্তাদের প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে মিটিং হয়।

 ইন্টারপোল জন্মাল কেমন করে। 


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) পর ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানি আর অস্ট্রিয়াতে নানা অপরাধের সংখ্যা দারুণ বেড়ে যায়। তার প্রধান কারণ হলো, এই দেশ দুটির যুদ্ধে পরাজিত হওয়ায় সেখানে অর্থব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা সব কিছুই একদম ভেঙে পড়ে। ফলে অপরাধও সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই রকম একটা অবস্থার সুরাহা করবার জন্য ভিয়েনা (অস্ট্রিয়ার রাজধানী Vienna) পুলিশের বড়কর্তা ইয়োহান স্কোবার (Johann Scober) ১৯২৩ সালে নিজের সরকারের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি দেশের পুলিশ প্রধানদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। বিশটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি একত্রিত হন আর তাতে স্কোবারকে ইন্টারপোলের প্রধান কর্মকর্তার পদ দেওয়া হয়।


এইভাবে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত চলল। তারপর নাৎসী (Nazi) জার্মানি অস্ট্রিয়া আক্রমণ করায় ইন্টারপোল উঠে যায়। এরপর আরম্ভ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫), ফলে কোনো দেশের পক্ষেই আর অন্য কোনো দিকে মন দেওয়া সম্ভবপর ছিল না। যুদ্ধের পর বেলজিয়াম পুলিশের কর্তা ফ্লোরা লোভাগে (Flaurant Lovagay) ইন্টারপোল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেল্স (Bryssels) শহরে সদরদপ্তর রাখার তেমন সুবিধা না হওয়ায় সেটি চলে আসে ফ্রান্সের রাজধানী পারী শহরে।


ভারতবর্ষ ইংরেজ আমল থেকেই ইন্টারপোলের সদস্য। ইন্টারপোলের নিয়ম অনুযায়ী একটি দেশ চারভাবে অন্য দেশের সাহায্য পেতে পারে। এক, দেশত্যাগী অপরাধীকে কয়েদ করে তাকে স্বদেশে ফেরৎ পাঠাবার ব্যবস্থা করা। দুই, স্বদেশে ফেরত না পাঠিয়ে অপরাধী ও তার কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা। তিন, চোরাকারবারী কী কী জিনিস পাচার করছে তার হদিস জানানো। চার, বিদেশ গত কোনো ব্যক্তির মৃতদেহ যদি সনাক্তকরণ না হয় তবে তার বিবরণ পাঠান।

Leave a Comment