যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চোখ রংয়ের পার্থক্য বুঝতে পারে, তা এখনও বিজ্ঞানীদের পুরোপুরি বোধগম্য নয়। আর তাই এ-ব্যাপারে নানা মতবাদ প্রচলিত আছে । বর্ণানুভূতির এ ব্যাপারে ব্যাপকভাবে যে মতবাদ গৃহীত হয়ে থাকে তার নাম “ইয়ং হেলোমহোল্টজ' মতবাদ ১৮০১ সালে ইংরেজ ডাক্তার ও পদার্থবিদ 'থমাস ইয়ং' (Thomas Young) উক্ত মতবাদের প্রস্তাব করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জার্মান বিজ্ঞানী 'হারম্যান ভন হেলোমহোল্টজ' (Herman Von Helmholtz) উক্ত মতবাদের আরও উন্নতি সাধন করেন ।


এই মতবাদে বলা হয় যে-  আমাদের চোখের অক্ষিপট পানির ন্যায়। ১৩০ মিলিয়নেরও (১৩ কোটি) বেশি সংখ্যক দৃঢ় তত্ত্বগুচ্ছের সমন্বয়ে অক্ষিপটের ঐ জালি গঠিত। স্নায়ুতন্তুগুলো দুধরনের আলোক সংবেদনশীল গ্রাহক বস্তু দিয়ে তৈরি। গ্রাহকদ্বয়ের একটির নাম 'রড' (Rods), আর অন্যটির নাম 'কোণ' (Cones)। 'কোণগুলো রঙিন আলোয় সংবেদনশীল । অন্যদিকে 'রড'গুলো সাদা ও কালো রং-এ শুধু সাড়া জাগায় ।


'কোণ' তিন প্রকারের হয়। লাল, সবুজ আর নীল-এই প্রাথমিক তিন বর্ণের আলোয় ঐ তিন প্রকারের কোণ সাড়া দেয়। প্রত্যেক প্রকার কোণের নিজস্ব দর্শন-সংক্রান্ত রঞ্জক (Visual pigment) পদার্থ আছে। রঙিন আলো উক্ত তিন প্রকার কোণের বিভিন্ন অংশকে উত্তেজিত করে। এই প্রক্রিয়াতে অন্তবর্তী রংগুলোও সৃষ্টি হয় ও (প্রাথমিক বর্ণগুলোর সমন্বয়) তাদেরকে সনাক্ত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ-সবুজ আলোয় সংবেদনশীল কোণগুলো সবুজ আলোতে উত্তেজিত হয়। অন্যদিকে হলুদ আলোতে—লাল ও সবুজ আলোয় সংবেদনশীল কোণগুলো সমভাবে উত্তেজিত হয় বলে তাদের সম্মিলিত রং হলুদের বর্ণানুভূতি জাগায়। রঙিন টেলিভিশনের গ্রাহকযন্ত্রেও ঐ একই প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়ে থাকে।

Leave a Comment