মেরু বা তুন্দ্রা অঞ্চল কাকে বলে?


 পৃথিবীর অক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তকে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বলে। সাধারণ মানুষ ভাবে যে, উভয় মেরুই একই রকম। কিন্তু আসলে তা সত্য নয়। যদিও মেরু অঞ্চল সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পাওয়া গেছে। তবুও মেরু অঞ্চলকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিরাট রহস্য এখনও রয়ে গেছে। উত্তর-মেরুকে ঘিরে যে অঞ্চল তাকে সুমেরু অঞ্চল (Arctic Region) বলে। তেমনি দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে যে অঞ্চল তার নাম কুমেরু অঞ্চল (Antarctic Region)। সুমেরু অঞ্চলে আছে উত্তর মহাসাগর (Arctic Ocean), উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়া। উত্তর মেরুতে বছরের ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত হয়। চারিপার্শ্বের পানিরাশি থেকে এখানে

বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থকে। তাতে তাপমাত্রা সামান্য বাড়ে। উত্তর-মেরুতে তাপমাত্রার পরিবর্তন- ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে হয়। উক্ত তাপমাত্রায় প্রাণী বা উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে। তাই এখানে বসতি গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের লোকদের বলে এক্সিমো (Eskimos) | দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে বা কুমেরু অঞ্চল অত্যাধিক ঠাণ্ডা। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশই বরফাবৃত থাকে। এটাই পৃথিবীর শীতলতম অঞ্চল। এর বরফাবৃত ক্ষেত্রের পরিমাণ সমগ্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণের সমান। শীতের দিনে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে, – ৭৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে – ৪৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। এমনকি গ্রীষ্মকালীন মাসগুলোতেও গড় তাপমাত্রা থাকে শূন্য ডিগ্রির (Freezeng Point) নিচে। পেঙ্গুইন হলো এই অঞ্চলের বিখ্যাত পাখি। কিছু কিছু পোকা-মাকড়ও এখানে বেঁচে থাকতে পারে। কুমেরু অঞ্চলে বছরের ৬ মাস পুরো অন্ধকার বা রাত হয়। কুমেরু অঞ্চলে কোনো আঞ্চলিক বসবাসকারী (Native Population) নেই। উদ্ভিদও এত কম যে কেবলমাত্র লিচেন ( Lichens ), মাস (Moss), কিছু ঘাস (Grass) ও কিছু সপুষ্পক উদ্ভিদই এখানে জন্মাতে (Grow) পারে । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলকে অনুসন্ধান করে দেখার চেষ্টা করছেন। ভারতীয় দুটি অভিযাত্রীদল ইতোমধ্যে ঐ অঞ্চল ঘুরে এসেছে। কুমেরু অঞ্চল সম্পর্কে বেশ কিছু নতুন তথ্য তারা আবিষ্কার করেছেন। এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্ম (Fossil) এটাই নির্দেশ করে যে, এককালে অঞ্চলটি বেশ উষ্ণ ছিল এবং নানা উদ্ভিদে তা আবৃত ছিল। তবে এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি যে, কেমন করে সেই অবস্থার এমন বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

কীসের জন্য সমুদ্রে জোয়ার-ভাটা হয়?

 সমুদ্রের বিশাল পানিরাশির নির্দিষ্ট সময়ান্তরে এক একবার ফুলে ওঠা ও নেমে যাওয়াকে জোয়ার-ভাটা বলে। বিপুল পানিরাশির বিশাল ঐ ঢেউ কখনও এত উঁচু দেখায় যে, মনে হয় যেন সমুদ্রের উপর দিয়ে সুউচ্চ দেওয়াল ছুটে আসছে। তোমরা কী জানো কীসের জন্য সমুদ্রে জোয়ার- ভাটা হয়? চাঁদ ও আমাদের পৃথিবীর মধ্যকার আকর্ষণ বলই হলো সমুদ্রে জোয়ার-ভাটার প্রধান কারণ। আমরা জানি- বিশ্বের সকল বস্তুই পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। ঐ আকর্ষণ বলকে 'মহাকর্ষ বল' (Gravitational Force) বলে। চাঁদ আর পৃথিবীর মধ্যে উক্ত মহাকর্ষ বলই ক্রিয়া করে। পৃথিবী চাঁদকে, আর চাঁদ পৃথিবীকে তার নিজের দিকে টানে। চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যকার এই মহাকর্ষ বল এত প্রবল যে, ৪০০ কি. মি. ব্যাসযুক্ত স্টিলের দণ্ডকেও ভেঙে ফেলতে পারে। যদিও এই বল পৃথিবীর কঠিন আবরণকে কোনোক্রমেই বিচলিত করতে পারে না, তবুও সমুদ্রের বিপুল পানিরাশিকে একবার ওঠায় ও একবার নামায় । সমুদ্রের কোনো স্থানে পানি-সমতল (water level) ক্রমাগত ৬ ঘণ্টা ধরে উঁচু হয়ে উঠতে থাকে পরবর্তী ৬ ঘন্টা ধরে পানি-সমতল আবার নিচে নামতে থাকে। পানির এই উঠাকে বলে জোয়ার আর নামাকে বলে ভাটা। প্রতি ১২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর পর সমুদ্রের জলে জোয়ার আসে। তার অর্থ হলো— দিন-রাতে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে, সমুদ্রের প্রতিটি স্থানে। দুবার জোয়ার-ভাটা হয়। সমুদ্রের যে দিকটা চাঁদের দিকে মুখ করে থাকে। সেখানে যেমন জোয়ার-ভাটা হয়— তেমনি তার বিপরীত দিকের সমুদ্রেও জোয়ার-ভাটা হয়। যেহেতু চাঁদ ১২ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে পৃথিবীর বিপরীত পার্শ্বে চলে আসে সেহেতু পূর্বের ঐ দুই জায়গায় আবার জোয়ার-ভাটা দেখা দেয় (উপরের ছবি দেখ)। সূর্য ও পৃথিবীর ভিতরকার আকর্ষণ বলও সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কিঞ্চিত প্রভাবান্বিত করে। সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ যখন একই সরলরেখায়

থাকে তখন পৃথিবী সব থেকে বেশি টানের জোর অনুভব করে। এই সময় জোয়ারের পানি খুব বেশি ফুলে ওঠে। একে 'ভরা কটাল' (Spreng tide) বলে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যাতেই শুধু ভরা কটাল দেখা যায়। সূর্য চাঁদের অবস্থান যখন সমকোণে (perpendicular) হয়, তখন পৃথিবীর উপর তাদের মোট টানের জোর হয় সব থেকে কম। ঐ সময় যে জোয়ার হয় তার স্ফীতি হয় খুব কম । এই জোয়ারকে বলে ‘মরা কটাল' (neap tide) (উপরের ছবি দেখ)। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার মধ্যবর্তী সময়েই মরা কটাল পরিলক্ষিত হয়। জোয়ারের পানি ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। জোয়ার-ভাটায় সুবিধা অনেক। জোয়ারের পানি সমুদ্রের অনেক মূল্যবান সামগ্রিকে উপকূলে নিয়ে আসে। 

কুয়ান্টাম থিয়োরী কাকে বলে? 

আলোক এখনও মানুষের কাছে মহা-বিস্ময়কর বস্তুদের মধ্যে অন্যতম। আমরা জানি যে, আলো বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বিক তরঙ্গাকারে ভ্রমণ করে। বৈদ্যুতিক ও চৌম্বিক ভেক্টর (Vector) দ্বারা এই তরঙ্গগুলো গঠিত— এটা পরস্পরের সমকোণে অবস্থিত এবং বিস্তৃত হওয়ার দিকের সাথে ও সমকোণে অবস্থিত। পদার্থ বিজ্ঞানবিদ ম্যাক্সওয়েল (Mazwell) আলোকের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক থিয়োরী (electromagnetic theory) অর্থাৎ‍ বৈদ্যুতিক-চৌম্বিক থিয়োরী প্রতিষ্ঠা করেন। এই থিয়োরী খুবই ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ক্ষেত্রে কিছু কিছু ইন্দ্রিয়গোচর ব্যাপার ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়নি। আমরা জানি যে, রক্তবর্ণ উত্তপ্ত বস্তু সাধারণত লাল আলো বিস্তার করে। এই আলোকের ফ্রিকুয়েন্সি (frequency) যে বস্তুকে উত্তপ্ত করা হয় সেই বস্তুর ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে বস্তুত তাপমাত্রার উপর। ইলেকট্রোম্যাগটিক থিয়োরীর সাহায্যে তাপমাত্রা ও ফ্রিকুয়েন্সির পরস্পরের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আল্ট্রাভায়োলেট (ultraviolet) আলোকের ফ্রিকুয়েন্সি এই থিয়োরী ব্যাখ্যা করতে সফল হয়নি। এটাকে বলা হয় আলট্রাভায়োলেট ক্যাটস্ট্রিফি (ultraviolet catastrophe) যাই হোক, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির পদার্থবিদ্যাবিদ মাক্স প্ল্যাঙ্ক (Max planck) এই সমস্যার সমাধান করেন। তিনি বলেন যে, একটি বান্ডিল বা প্যাকেটের আকারে আলোর বিচ্ছুরিত হয়, একটি ক্রমনির্গত স্রোতে নয় । এই আলোকের প্যাকেটকে বলা হয় কুয়ান্টাম (quantum)। প্ল্যাঙ্ক কর্তৃক প্রদত্ত এই ব্যাখ্যা এখন 'কুয়ান্টাম থিয়োরী' (quantum theory) নামে

পরিচিত। এই থিয়োরী অনুযায়ী প্রতিটি কুয়ান্টামের এনার্জি এর ফ্রিকুয়েন্সির সঙ্গে সমানুপাতিক । ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে কুয়ান্টাম থিয়োরী ফটোইলেকট্রিক (Photoelectric প্রভাবের অপর একটি সমস্যাকে সমাধান করবে। এই থিয়োরার সহায়তায় জার্মানির পদার্থবিদ্যাবিদ 'আলবার্ট আইনস্টাইন' (Albert Einstein) তাঁর ফটোইলেকট্রিক এফেক্টের থিয়োরী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আলোকের কুয়ান্টামের নামকরণ করেন ‘ফটোন' (photons)। Maxwell Planck পরবর্তীকালে অ্যাটম (atom)-এর অনেক বিস্ময়কর বিষয় ব্যাখ্যা করার কাজে কুয়ান্টাম থিয়োরী ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পদার্থবিদ্যার অনেক প্রভাব কুয়ান্টাম থিয়োরীর সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভবপর হয়েছে। এখন পদার্থবিদ্যাবিদরা আলোককে কোনো কোনো বিষয়ে তরঙ্গ মনে করেন, আবার অন্য অনেক বিষয়ে একে কুয়ান্টাম বলে গণ্য করেন। এই থিয়োরীগুলোর যে কোনো একটি সফল বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারে না। সব গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব নেই কেন? সম্ভবত পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ, যেখানে জীবনের অস্তিত্ব বর্তমান। তার কারণ, শুধু পৃথিবীতেই জীবনধারণের উপযোগি সকল অনুকূল অবস্থা রয়েছে। এখন দেখা যাক, অন্য সব গ্রহে কি কি প্রতিকূল অবস্থা বিদ্যমান, যার জন্য সেখানে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় অসম্ভব হয়েছে। এক একটা গ্রহকে আমরা আলাদা আলাদাভাবে বিচার করব। বুধ গ্রহটি (Mercury) সূর্যের সব থেকে কাছে। শক্তিশালী দূরবীণ দিয়েও একে

লক্ষ্য করা অত্যন্ত কষ্টকর। গ্রহটির কোনো বায়ুমণ্ডল নাই। দিনের তাপমাত্রা কখনও কখনও ৪০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডও ছাড়িয়ে যায়। রাতের তাপমাত্রা নেমে যায় ১২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেরও নিচে। অক্সিজেনের অভাব আর প্রচণ্ড তাপমাত্রা বুধ গ্রহটিতে জীবনের অস্তিত্বকে অসম্ভব করে তুলেছে। নৈকট্যের দিক দিয়ে শুক্র (Venus) হলো সূর্যের দ্বিতীয় নিকটতম গ্রহ। গ্রহটিকে পৃথিবীর পড়শি-গ্রহ (sister planet) বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। পৃথিবী ও শুক্রর আকার, ভর ও ঘনত্ব প্রায় একই রকম। শুক্রের ব্যাস ও ভর যথাক্রমে পৃথিবীর ব্যাস ও ভরের ০.৯৫ ও ০.৪১৫ গুণ। কার্বন-ডাই- অক্সাইডের ঘন মেঘে (৯৫ শতাংশ) গ্রহটি আবৃত। শুক্র-পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ, পৃথিবী-পৃষ্ঠের বায়ু-চাপের ৯৫ গুণ। গড় তাপমাত্রা ওখানে প্রায় ৪৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই উচ্চ তাপমাত্রা শুক্রকে সৌরজগতের সর্বাপেক্ষা উত্তপ্ত গ্রহে পরিণত করেছে । এই অবস্থায় কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকা সেখানে সম্ভব নয়। পৃথিবীর পরে আসে মঙ্গল গ্রহ। গ্রহটি, পৃথিবী থেকে ঠাণ্ডা। গড় তাপমাত্রা ৬২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। রাতে তাপমাত্রা কখনও কখনও নেমে যায়— ১০১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। পৃথিবীর তুলনায় এর বায়ুমণ্ডল অনেক হাল্কা। দেখা গেছে, এর বায়ুমণ্ডলে আছে শতকরা ১-২ ভাগ আর্গন, ২-৩ ভাগ নাইট্রোজেন, ৯৫ ভাগ কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং ০.৩ ভাগ অক্সিজেন । উক্ত অবস্থাগুলো যদিও গ্রহটিতে জীবনের অস্তিত্বের নির্দেশ দেয়, তথাপি এ-যাবৎ ওখানে জীবনের অস্তিত্বের কোনো হদিস মেলেনি। মঙ্গলকে ছাড়িয়ে অন্যান্য গ্রহগুলো [বৃহস্পতি (jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস (Uranus), নেপচুন (Neptune) ও প্লুটো (pluto)] আছে সূর্য থেকে আরও দূরে। ঐ সব গ্রহগুলোর পৃষ্ঠতাপমাত্রা এত কম যে, সেখানে কোনো জীবিত প্রাণী (Living organism) বেঁচে থাকতে পারে না। তাছাড়া, ঐ গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলে আছে মিথেন, এমোনিয়া প্রভৃতি গ্যাস–যা কোনো প্রাণের বিকাশকে কোনোদিক দিয়েই সাহায্য করে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আমাদের সৌরজগতে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে জীবনের স্পন্দন বৰ্তমান ।

Leave a Comment