মানুষ উষ্ণশোণিতের এক প্রাণী। সকল ঋতুতেই তার শরীরের তাপমাত্রা একই থাকে। বাইরের পারিপার্শ্বিকতার দ্বারা তাপমাত্রা প্রভাবিত হয় না। একজন সুস্থ মানুষের সাধারণ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড অথবা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই তাপমাত্রা শরীরে থাকে বলেই আমাদের শরীর গরম থাকে। তোমরা কি জানো, আমাদের শরীরকে গরম রাখতে এই তাপ শক্তি কোথা থেকে আসে?




নিয়মিত আমরা যে খাবার খাই, তার থেকেই আমাদের শরীর তাপশক্তি গ্রহণ করে। খাদ্যবস্তু জারণ (Oxidation) প্রক্রিয়ার সাহায্যে তাপ উৎপন্ন করে। জারণ হলো এক প্রকার দহন (Combustion)। আমরা জানি যে জ্বালানি জ্বললে তাপ উৎপন্ন হয়। খাদ্যের জারণ প্রক্রিয়াও তেমনি করে তাপ উৎপন্ন করে। পার্থক্য শুধুমাত্র এই যে-জ্বালানির দহনকালে তাপ ও আলো উভয়ই উৎপন্ন হয়, অন্যপক্ষে খাদ্যের দহন ক্রিয়া যখন চলে তখন কোনো আলো উৎপন্ন হয় না। খাদ্যের দ্বারা উৎপন্ন তাপশক্তি বিভিন্ন কাজে আমাদের শরীর কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। মানব শরীরে প্রতিদিন সাধারণত ২৫০০ ক্যালরি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। এই তাপশক্তি শরীরকে গরম রাখে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশকে বিভিন্ন রকম কাজ করতে সক্ষম করে তোলে।




মস্তিষ্কের “তাপমাত্রা কেন্দ্র" (Tempetature centre) দ্বারা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কেন্দ্রটির তিনটি অংশ থাকে যথা- (১) নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র-এটি রক্তের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে; (২) তাপ কেন্দ্র (Heating centre)-এটি রক্তের তাপমাত্রা কমে গেলে তাকে বাড়িয়ে তোলে; এবং (৩) শীতলীকরণ কেন্দ্র (Cooling centre)-এটি রক্তের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তাকে কমিয়ে আনে।




মস্তিষ্কের তাপমাত্রা কেন্দ্রে কোনো গোলযোগ দেখা দিলে শরীর কাঁপতে শুরু করে (Shivering) এবং জ্বররূপে তা প্রকাশ পায়। যদি গোলযোগটি তাপকেন্দ্রে ঘটে তবে কাঁপুনির সৃষ্টি হয়, আর যদি শীতল-করণকেন্দ্রে ঘটে তবে শরীরে জ্বর আসে। শরীর সব সময়ই তাপ তার চতুর্দিকে বিকিরণ করে। যখন আমরা কোনো কিছুর উপর ঘুমাই কিংবা বসে থাকি তখন সেটা গরম হয়ে ওঠে। আমাদের শরীর থেকে তাপ বিকিরিত হয় বলে এমনটি হয়।

Leave a Comment