ইতালিয় শব্দ বাংকা (banca) থেকে ইংরেজির ব্যাংক (bank) শব্দটি এসেছে। মূল শব্দের মানে হলো বেঞ্চ। মধ্যযুগে ইউরোপীয় নবজাগরণ বা রেনেসাঁ (renaissance) যখন ঘটল তখন ইতালি তার পুরোধায় থাকার জন্য অনেক কিছুই সেখানে নতুন দেখা দিল। সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য টাকা-পয়সার লেন-দেন ভীষণ বেড়ে যায়, ফলে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসে দেনা-পাওনা বোঝার দরকার হয়। আর এই কাজটাই হতো বেঞ্চে বসে। ১৫৮৭ সালে ভেনিসে বাংকো দি রিয়াল্টো (Banco di Rialto) এভাবেই কাজ শুরু করে।
ব্যাংকের কাজ সেকালে খুব সহজ লেন-দেনের পর্যায়ে থাকলেও ক্রমশ সমাজজীবনে অর্থনীতির নানা জটিলতার জন্য কাজের ধারা পাল্টাতে থাকে। গোড়ার দিকে ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখা, সোনা-রূপা জমা রেখে তার পরিবর্তে টাকা নেওয়া, হুণ্ডিতে টাকার হিসেব কষা, এইসব কাজ থেকে দেখা দিল সরকারি দায়িত্ব। কেননা ব্যাংকের আদিকালে সমস্ত ব্যাপারটাই ছিল ব্যক্তিগত মালিকানার অধীন। আর টাকা-পয়সা তখন হতো শুধু সোনা-রূপার তাই লেনদেন সারা দেশে বা দেশের বাইরেও আটকাত না।
ইতালিতে ব্যাংকের কাজ আরম্ভ হলেও ইংল্যান্ডের শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে- সঙ্গে দেখা গেল, যুদ্ধবিগ্রহ বা সরকারি কাজ কারবার চালাবার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকা খুব জরুরি। ১৬৯৪ সালে আরম্ভ হলো ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড। কিন্তু ১৭৫০ পর্যন্ত এই ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে দেখা দেয়নি আর সরকার নোট ছাপিয়ে সমস্ত অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের কাজ ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় আরম্ভ হলো ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৮১৪-১৯১৮) পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। প্রায় ২৭,০০০ ব্যক্তিগত মালিকানার ব্যাংক আমেরিকায় ১৯২৯ পর্যন্ত কাজ করতে থাকে। তারপর সেখানে এক বিরাট অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেবার পর সমস্ত ব্যাংক ১৯৩৩ সালে প্রায় তছনছ হয়ে যায়। তখন আমেরিকায়ও একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চালু করা হয়।
ভারতবর্ষে আলেকজান্ডার এন্ড কোম্পানি প্রথম ব্যাংক খোলে কলকাতায়, নাম হলো হিন্দুস্তান ব্যাংক। সেটা ছিল ১৭৭০ সালে, কিন্তু কোম্পানি ফেল করায় ১৮৩২ সালে ব্যাংক উঠে যায়। তারপর ১৭৮৫ সালে আর একটা চালু হয়ে ১৭৯১ সালে উঠে যায়। আসলে সরকারের তরফ থেকে প্রথম ব্যাংক খোলা হয় ব্যাংক অফ বেঙ্গল নামে ১৮০৪ সালে। এরপর মুম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ১৮৪৩ সালে ব্যাংকের কাজ আরম্ভ হয়। ১৯২০ সালে বেঙ্গল, বোম্বাই আর মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ব্যাংকগুলোকে একসঙ্গে সমিতিবদ্ধ করে ১৯২১ সালে ইম্পিরিয়াল ব্যাংক কাজ আরম্ভ করে। এখন এর নাম স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া যার কাজ ১৯৩৫ সালে চালু হয়।
এছাড়া আছে ইউনাইটেড নেশন্সের তরফ থেকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, যার কাজ হলো, বিভিন্ন দেশকে আন্তর্জাতিক কাজ অথবা দেশের মধ্যে আভ্যন্তরীণ উন্নতির জন্য টাকা ধার দেওয়া। এরপর আছে আরও কতকগুলো এই ধরনের আন্তর্জাতিক ব্যাংক যাদের সবার কাজ হলো উন্নয়নের নাম করে টাকা ধার দিয়ে গরিব দেশগুলোকে বড়লোক দেশগুলোর জন্য শোষণ করা। 1
Leave a Comment