বস্তুকে দেখার জন্যই আমাদের চোখ। ক্যামেরার মতোই এর কাজ। চোখের আকার গোলকের ন্যায়। চোখের কালো অংশকে বলে অচ্ছেদ- পটল (Cornea)। এই কালো অংশের মাঝখানে থাকে ছোট গোলাকার একটি ছিদ্রপথ। একে চোখের মণি (Pupil) বলে। এই ছিদ্রপথেই চোখে আলো প্রবেশ করে। চোখের মণির পিছনে থাকে কনীনিকা (Lris)। এই কণীনিকা চোখে পতিত আলোর পরিমাণকে নিয়ন্ত্রিত করে। কনীনিকার পিছনে থাকে একটি উত্তল লেন্স (Convex lens)। চোখের সব থেকে পিছনের অংশে অক্ষিপট (Retina) বলে একটি পর্দা অবস্থিত থাকে। চোখ যে সকল বস্তু দেখতে পায়, তার প্রতিবিম্ব এই অক্ষিপটে সৃষ্টি হয়। অক্ষিপট এমন সব পদার্থের তৈরি (Rods and cones) যা অত্যন্ত আলোক সংবেদনশীল। অপটিক নার্ভ দ্বারা অক্ষিপট ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত। চোখের লেন্স ও অক্ষিপটের অন্তবর্তী স্থানে ভিট্রিয়াস হিউমার (Vitreous humour) নামে এক প্রকার স্বচ্ছ জেলীর মতো তরল পদার্থ থাকে। তেমনি করে লেন্স ও চোখের মণির অন্তবর্তী স্থানে একুয়াস হিউমার (Aqueous humour) নামে আর এক প্রকার তরল পদার্থ থাকে। চোখের সাদা অংশকে বলে শ্বেতমণ্ডল (Sclera)। এখন প্রশ্ন হলো- আমরা কেমন করে দেখি?
বস্তু থেকে আলো এসে আমাদের চোখের অচ্ছেদ-পটলের উপর পড়ে। চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে এই আলো অতিক্রান্ত হয়ে অক্ষিপটে বস্তুর এক অবশীর্ষ (Inverted) প্রতিবিম্ব গঠন করে। বিদ্যুৎ-সংকেতের মতো এই প্রতিবিম্ব অপটিক নার্ভের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছে। মস্তিষ্ক এই প্রতিবিম্বকে আবার উলটে (Inverted) দিয়ে বস্তুর সর্বশীর্ষ প্রতিবিম্ব তৈরি করে এবং তখনই আমরা প্রকৃত বস্তুটিকে দেখতে পাই। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুত ঘটে। যদি দুটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা ১/৬ সেকেন্ডের মধ্যেই সংঘটিত হয় তাহলে ঐ দুটি ঘটনা অবিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা রূপেই চোখে ধরা পড়বে। প্রেক্ষাগৃহে আমাদেরকে প্রতি সেকেন্ডে ১৬টি ছবি দেখানো হয়। তাই বিরামহীন দৃশ্য বা ঘটনা প্রবাহ আমাদের চোখে ফুটে ওঠে। আলো বেশি হলে কনীনিকা চোখকে সংকুচিত করে—আর কম আলোয় তাকে করে প্রসারিত। অক্ষিপটের শঙ্কু (Cone) আমাদেরকে বিভিন্ন বর্ণ বুঝতে সাহায্য করে। আর অক্ষিপটের দত্ত (Rods) আমাদেরকে সাহায্য করে কম আলোতে দেখতে। বেগুনি থেকে লাল পর্যন্ত সকল বর্ণের আলোর ক্ষেত্রেই আমাদের চোখ সংবেদনশীল ।
Leave a Comment