আমাদের দেহটি একটি চুল্লির মতো। যে খাদ্য আমরা খাই, তা দেহাভ্যন্তরে জ্বালানির মতো কাজ করে। জারণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে (Process of oxidation) দেহে তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির শরীরে প্রতিদিন ২৫০০ ক্যালরি তাপ উৎপন্ন হয়। উক্ত তাপ—শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ২৫ কিলোগ্রাম পানিকে ফুটাতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো—শরীরে এই তাপের কারণে কী ঘটে?




আমাদের শরীরে কিছু বিপাকীয় কর্ম তৎপরতা (Metabolic activities) সব সময়ই সংঘটিত হয়ে চলে যা শরীরের তাপমাত্রাকে ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যেতে দেয় না। ঘেমে যাওয়ার মাধ্যমে দেহচুল্লি তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখে। প্রকৃতপক্ষে, মস্তিষ্কে অবস্থিত 'তাপমাত্রা কেন্দ্র' (Temperature centre), কর্তৃক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কেন্দ্রটির তিনটি অংশ থাকে—নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Control centre), উত্তাপন কেন্দ্র (Heating centre) এবং শীতলীকরণ কেন্দ্র (Cooling centre)।


কোনও কারণে যদি শরীরের রক্তের তাপমাত্রা তার স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়ে যায়, তাহলে উত্তাপন কেন্দ্র তখনই কাজ করা শুরু করে দেয়। তাছাড়া কিছু বিশেষ ধরনের গ্রন্থি থাকে, যারা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে। আমাদের মাংসপেশী ও যকৃত এই দাহ্য পদার্থকে ব্যবহার করে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আসে।




অন্যদিকে যদি কোনো কারণবশত শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে শীতলীকরণ কেন্দ্রটি কাজে নামে। জারণ প্রক্রিয়াটি তখন ধীর গতিতে চলে। ঘামের গ্রন্থিগুলো তখন ঘাম পরিত্যাগ করা শুরু করে। পানি, ইউরিয়া এবং লবণ ঘামের সাথে বেরিয়ে আসে। ঘামের গ্রন্থিগুলো তখনই দ্রুত কাজ করে, যখন শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা উর্ধ্বে উঠে যায়। শরীরের তাপে ঘাম বাষ্পীভূত হয় এবং তার ফলে শরীরটা ঠাণ্ডা বোধ হয়। গরমের দিনে মাটির কলসিতে পানি রেখে ঠাণ্ডা করার মতোই হলো এ-প্রক্রিয়াটি। বাষ্পীভবন (Evaporation) সব সময়ই শীতলতার কারণ। ঘাম সেই জন্য শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণের এক কার্যকরী উপায়। শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশকেও এটি পরিষ্কার করে। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর অনেক পদার্থ আমাদের চামড়ার লক্ষ লক্ষ ছিদ্রপথে পরিত্যক্ত হয়। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হলে ঘাম আমাদের অস্বস্তির কারণ ঘটায়। কারণ আর্দ্র অবস্থাতে বাষ্পীভবনের হার কমে যায়। বর্ষাকালে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে থাকা খুব আরামদায়ক। কারণ পাখার বাতাস ঘামের বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটিকে তখন ত্বরান্বিত করে ।

Leave a Comment