ছোট থেকে বড় হওয়া জীবনের এক স্বাভাবিক গতি। গাছপালা, পশু-পাখি, মানুষ সকলেই-গর্ভে আসার পর থেকেই বাড়তে শুরু করে। মায়ের গর্ভে প্রথম নয় মাস ধরে ভ্রূণ বড় হয় এবং ভূমিষ্ট হওয়ার পরও সে শিশু বড় হয়ে চলে ৷ নবজাত শিশুর উচ্চতা হয় প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার। পরবর্তী ২০ বছরে তার উচ্চতা এর তিন গুণেরও বেশি হয়। ২০ থেকে ২২ বছর বয়স হলে মানুষের এই বৃদ্ধিতে বা লম্বা হওয়া থেমে যায়। তোমরা কি জানো কেমন করে মানুষ বড় হয় এবং একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর তার বড় হওয়া কেন থেমে যায়?


প্রকৃতপক্ষে, প্রোটিনই হলো আসল জিনিস, যা আমাদের শরীর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাক-সব্জি, খাদ্যশস্য, ফলমূল কিংবা এসব থেকে তৈরি খাদ্যদ্রব্য থেকে আমরা প্রোটিন পাই। খাদ্যদ্রব্যের পাচন প্রক্রিয়ার সময় এই সব প্রোটিন এমিনো এসিডে পরিণত হয়। এই এমিনো এসিড শরীরের কোষ ও গ্রন্থিসমূহ (Cells and tissues) তৈরি করে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লোহা প্রভৃতি খনিজ জাতীয় পদার্থও শরীর বৃদ্ধির সহায়ক। গ্রন্থি, মাংসপেশী এবং হাড় উক্ত প্রোটিন ও খনিজ থেকেই তৈরি। ছিঁড়ে বা কেটে যাওয়া গ্রন্থি কিংবা কোষ এই প্রোটিনের সাহায্যেই জোড়া লাগে ।




এখন প্রশ্ন হলো : একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর আমাদের বৃদ্ধিটা থেমে যায় কেন, কেন আমরা আরও বেড়ে চলি না? আসলে, আমাদের শরীরের এনডোক্রাইন নামক লালা গ্রন্থিগুলো (Endocrine glands) শরীরের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থিগুলো হলো—গলার থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid glands of throat) মস্তিষ্কের পিটুইটারী গ্রন্থি (Pituitary glands), বক্ষের থাইমাস গ্রন্থি (Thymus gland) এবং কিছু আছে পুরুষ- নারী নির্ণায়ক গ্রন্থি (Sex glands)। পিটুইটারী গ্রন্থি হাড়ের ক্রমবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রিত করে। নবজাত শিশুর থাইমাস গ্রন্থি অনেক বড় থাকে। কিন্তু ১৩- ১৪ বছর বয়স হওয়ার পর এই গ্রন্থি সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। এই সময় পুরুষ-নারী নির্ণায়ক গ্রন্থি বা সেক্স গ্রন্থি শরীরের ক্রমবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। ২০-২২ বছরে শরীর পূর্ণ-পরিপক্কতা (Full maturity) লাভ করে এবং তারপর শরীরের ক্রমবৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। যে সব গ্রন্থি শরীরকে বাড়িয়ে তোলে তাদের কর্মক্ষমতা উক্ত বয়সের পর কমে যায়। তবে ধীরগতিতে ৩৫ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত শরীর তখনও বেড়ে চলে। এরপর শরীরের সঙ্কোচন শুরু হয়। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি দশ বছরে প্রায় এক সেন্টিমিটার করে এই সঙ্কোচন হয়। মেরুদণ্ড এবং অস্থিসন্ধির তরুণাস্থিসমূহ (Cartilages) শুকিয়ে যাওয়ার ফলেই এই সঙ্কোচন ঘটে ।




শরীরের ক্রমবৃদ্ধি ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন হয়। শিশুরা শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালেই বাড়ে বেশি। পুষ্টিকর খাবার শরীরের দ্রুত বৃদ্ধিকে সাহায্য করে। তোমরা জেনে অবাক হবে যে, প্রতিদিন সকালে আমরা আগের দিনের সন্ধ্যার তুলনায় সামান্য লম্বা হই। অবশ্য, দিনের বেলায় আমরা সামান্য খাটো হয়ে যাই।



Leave a Comment