আমরা যখন ঘুমাই তখন স্বপ্ন দেখি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, প্রায় প্রতিটি লোকই প্রতি রাতে প্রায় দুতিনবার স্বপ্ন দেখে। যারা বলে যে 'আমরা স্বপ্ন দেখি না'-তারা প্রকৃতপক্ষে, ঘুম থেকে জাগার পর স্বপ্নের কিছুই মনে করতে পারে না। তবে কেউ কেউ স্বপ্নের প্রতিটি অংশই মনে রাখতে পারে। স্বপ্ন কখনও আনন্দময়, কখনও ঘটনাবহুল আবার কখনও বা ভীতিপ্রদ হয় ।




আমাদের সকল স্বপ্নই আবেগ, রোমাঞ্চ, ভয়, কামনা, ইচ্ছা প্রভৃতির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকে। কেউ যদি ক্ষুধার্ত বা তৃষ্ণার্ত থাকে, তাহলে তার স্বপ্ন ঐ সব অনুভূতির সাথে জড়িত থাকতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে— আমাদের সকল অপূর্ণ ইচ্ছা বা কামনা (Urges) স্বপ্নের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। স্বপ্ন আমাদের অবদমিত ইচ্ছাকে বের করে দেওয়ার পথ করে দেয়।




যখন কেউ স্বপ্ন দেখে, তখন তার চোখের নড়াচড়ার গতি অতি দ্রুত হয়। মনে হয় যেন সে স্বপ্নের ঘটনাবলিকে অবলোকন করেছে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত চোখের এই নড়াচড়ার গতি স্থায়ী হয়। এই সময়ে মস্তিষ্কের তরঙ্গের প্রকৃতিও (Brain's wave pattern) পরিবর্তিত হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য কখনও কখনও ঐ তরঙ্গ-প্রভৃতি রেকর্ড করা হয় । এই রেকর্ড করাকে বলা হয় ‘ইলেস্ট্রো-এনসিফালোগ্রাম' (Electroenciphalogram)।




মনোবিশ্লেষকেরা (Psychoanalysts) বিশ্বাস করেন যে, আমাদের যে সমস্ত ইচ্ছা সত্যে রূপ নেয়নি, স্বপ্ন হলো—সেই সব ইচ্ছারই প্রকাশ। কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী (Psychologists) মনে করেন—স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক তার রেকর্ডকৃত কার্যাবলি শেষ করে (Clears its register) পরবর্তী দিনের সচেতন কার্যাবলির জন্য নিজেকে তৈরি করে রাখে।




কেউ কেউ বলেন যে তাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে স্বপ্নের মাধ্যমে। বিখ্যাত রসায়নবিদ কেকুলি (Kekule) শুধুমাত্র একটি স্বপ্ন দেখার পরই বেনজিন অণুর গঠন-প্রকৃতি প্রদান করেন। বেনজিনের আণবিক গঠনের (Molecular structure) স্বপ্ন দেখাকালীন তিনি দেখেছিলেন যে, একটি সাপ ঘূর্ণায়মান অবস্থায় (in whirling motion) তার নিজের লেজ কামড়িয়ে চলেছে।




কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ভবিষ্যতে কী ঘটবে, স্বপ্ন তা বলে দিতে পারে। স্বপ্ন দেখার ব্যাপারটি বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি। তবে এটাই বিশ্বাস করা হয় যে, স্বপ্ন দেখা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারি।





Leave a Comment