যদিও সব মানুষের রক্ত দেখতে একই রকম, তবুও প্রকৃতপক্ষে কিন্তু তা নয়। লোহিত কণিকা (Red blood corpuscles), শ্বেত কণিকা (White blood corpuscles), রক্তমধ্যস্থ অনুচক্রিকা বা পর্দা (Platelet) এবং রক্তরসের (Plasma) সমন্বয়ে সাধারণত আমাদের রক্ত গঠিত। অণুবীক্ষণিক নিরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের লোহিত কণিকার উপরিতলে অবস্থিত দেহস্থ বিষাক্ত পদার্থ নষ্টকারী পদার্থের Antigen) অণুগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এদেরকে এন্টিজেন বলা হয়। এন্টিজেন অণুগুলো এক রকমের প্রোটিন। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এন্টিজেন অণুগুলোর এই পার্থক্যই রক্তের বিভিন্ন শ্রেণি সৃষ্টি করে।




১৯০০ সালে ডা. কার্ল ল্যান্ড স্টেইনার (Dr. Carl Land Stainer) A ও 'B' নামে দুই প্রকারের এন্টিজেন আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য মেডিসিনের ক্ষেত্রে তাকে ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। রক্তে ‘A' শ্রেণির এন্টিজেন থাকলে তাকে 'A' শ্রেণির রক্ত এবং ‘B’ শ্রেণি এন্টিজেন থাকলে 'B' শ্রেণির রক্ত বলে বিভক্ত করা হয়। এর পরই আবিষ্কৃত হলো, কোনো কোনো লোকের রক্তে A ও B উভয় শ্রেণির এন্টিজেন বিদ্যমান। এই ধরনের রক্তকে AB শ্রেণি বলে চিহ্নিত করা হলো। যে রক্তে A কিংবা B-এর কোনোটাই নেই, তাকে O শ্রেণির রক্ত বলা হলো। এইভাবে সকল মানুষের রক্তকে চার শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এ যাবৎ যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার থেকে জানা গেছে যে মানব রক্তে ২০০-এরও বেশি শ্রেণি বিভাগের অস্তিত্ব বর্তমান ।




তবে রোগীর শরীরে রক্তদান সংক্রান্ত ব্যাপারে শুধুমাত্র উপরোক্ত চার শ্রেণির রক্তই দরকারি । রোগীর শরীরে রক্তদানের পূর্বে তার রক্তের শ্রেণি পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন। রোগীর শরীরে রক্তদানের পূর্বে রোগীর ও দাতার রক্তের শ্রেণি মিলানো একান্ত প্রয়োজনীয়। দেখা গেছে—আপন ভাই বা বোনদের রক্তের শ্রেণি এক নাও হতে পারে। অপরপক্ষে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের দুই ব্যক্তির রক্তের শ্রেণি এক হতে পারে। A শ্রেণির রক্তকে শুধুমাত্র A অথবা AB রক্ত শ্রেণিধারী ব্যক্তিদেরকেই দেওয়া যেতে পারে। তেমনিভাবে AB শ্রেণির রক্তকে B অথবা AB রক্তশ্রেণিধারী ব্যক্তির শরীরেই অনুপ্রবেশ করানো যেতে পারে। কিন্তু AB শ্রেণির রক্তকে কেবলমাত্র AB শ্রেণির রক্তধারী ব্যক্তিকেই দেওয়া যায়। O শ্রেণির রক্ত যে কোনো রক্তশ্রেণিযুক্ত

 ব্যাক্তিকে দেওয়া যায়।




Leave a Comment